গল্প - #মন্ত্রী_মশাই_ভালোবাসে_তোমায়
লেখনীতে - #মোছাম্মৎ_তাপছিরা_চৌধুরী
অন্তিম পর্ব
........ পেরিয়েছে ছয় বসন্ত........
-পাপা, পাপা ভাইয়্যু হিত মি...বলেই ছোট মেয়েটা ভ্যা ভ্যা কান্না শুরু করলো।
আসিফ মনযোগ দিয়ে অফিসের ফাইল দেখছিল , মেয়েকে কাঁদতে দেখে ফাইলটা পাশে রেখে মেয়ের দিকে দুহাত বাড়িয়ে দিলো....-পাপার কাছে এসো প্রিন্সেস...।
মেয়েটা ওভাবেই পাপার দিকে হাটা ধরলো...।
-ডোন্ট লাই বোনু, আমি কখন মেরেছি তোমায়...?
পেছন থেকে গমগমে গলায় বলে উঠে ছেলে, তার পেছনেই দাঁড়িয়ে আছে তাপছিরা।
তাপছিরার টুইনস বেবি হয়েছিল,ছেলে- আদ্রিয়ান মাহমুদ তাহিন, মেয়ে- অদ্রীনা মাহমুদ তাহুরা। বয়স তাদের পাঁচ এর ঘরে, মেয়েটা বরাবরই চঞ্চল প্রকৃতির, তবে ছেলেটা একদমই উল্টো, কে বলবে এটা ৫ বছরের ছেলে, মা-সা-আল্লাহ দেখতে যেমন বড় বড় , কথাবার্তা আরো গম্ভীর তার, মেয়েটা যেমন মায়ের ফটোকপি , তেমনই ছেলেটা হয়েছে বাপের ফটোকপি। বিয়ের আগে আসিফ এমনই ছিল সারাক্ষণই গম্ভীর মোডে থাকতো.।
-আব্বু তুমি কী বোনুকে মেরেছো....?...তাপছিরা ছেলেকে প্রশ্ন করলো।
-নো মাম্মা, একটু বকেছি শুধু।
আসিফ তাপছিরা একে অপরের দিকে তাকালো কেমন সোজা উত্তর 'একটু বকেছি শুধু'। মেয়ের কান্না থেমে গিয়েছে , সে গুটিসুটি মেরে বাবার বুকে মাথা ঠেকিয়ে কোলে বসে আছে , তাহিন এগিয়ে গেলো বাবা আর বোনের দিকে। তাপছিরা তখনও নিজের জায়গায় দাড়িয়ে, সে শুধু ছেলের কান্ড দেখছে, যেন কয়েক বছর আগের তার আসিফ ভাইকে দেখতে পাচ্ছে সে।
-আমি মেরেছি তোমায়.....? তাহিন বাবার সামনে গিয়ে বোনের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো।
-তুমি পতা কথা নাই তোমাল তাতে...তাহুরা ভাইয়ের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো।
এবার তাহিন বাবার পাশে বসলো , বোন অভিমান করেছে এবার বোনকে শাসন না করে, একটু আদর করা দরকার বলে মনে হলো তার। তাহিন বোনের গালে হাত দিয়ে বললো......
-বোনু আমার দিকে তাকাও, ভাইয়্যু কিচ্ছু বলবো না আর...।
মেয়েটা তাকালো, এতক্ষণ করে থাকা অভিমান গুলো গলগল করে গলে গেলো মেয়েটার। কথায় কথায় ভাইয়ের সাথে অভিমান করলেও ভাইয়ের একটুখানি আদর পেয়ে ভুলে যায় সব, হয়েছে একদম ভাইয়ের ন্যাওটা।
-বেশি বেশি চকলেট খাওয়া ভালো না, তাই ভাইয়্যু বকেছি তোমায়।
-তকলেত আমাল ফেবালিত, কেতে ইত্তে কলে আমাল।
আসিফ তাপছিরা দুজনেই মেয়ের কথা শুনে ঠোঁট চেপে হাসছে , ছেলে-মেয়ে দুজনের বয়স সেইম হলেও মেয়েটা এখনো কথা বলে আদু আদু, যা শুনতে ভীষণ চমৎকার শুনায়...।
-আচ্ছা একদিনে একটা করে খাবে বুঝলে, বেশি খেলে দাঁত নষ্ট হয়ে যাবে, দাঁত নষ্ট হয়ে গেলে আমার বোনুকে বিয়ে দিবো কীভাবে , বোনু কর বিয়ে করতে চাইনা.....?
মেয়েটা মন দিয়ে ভাইয়ের কথা শুনলো, বিয়ে শুনে চোখ চকচক করে উঠলো তার, সে ঘনঘন দুপাশে মাথা নাড়িয়ে বললো....
-কলবো কলবো বিয়ে....বলেই ফিক করে হেসে দিলো।
-ভাইয়্যু লাভস ইউ বোনু...তিহান বোনকে বাবার কোলে থাকা অবস্থায় জড়িয়ে ধরলো.।
-তাহুলা লাভস ভাইয়্যু..।
দুই ভাই-বোন খিলখিল করে হেসে উঠলো। তাপছিরা এসে ছেলে-মেয়েকে জড়িয়ে ধরলো... -এন্ড মাম্মা পাপা লাভস বথ অফ ইউ।
_________________
-নিধি মা আমার এইটুকু খাবারই তো খেয়ে নাও না মা, মাম্মা কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছি।
-এই পতা ভাত গুলা আমি খাবো না....নাওমি চৌধুরী নিধি, নিলয় আর নীলিমার একমাত্র মেয়ে , ভীষণ দুষ্টু , বেচারি নীলিমার অবস্থা নাজেহাল মেয়েকে সামলাতে সামলাতে।
-খেয়ে নাও না সোনা, এক্ষুনি তাহিন আসবে কিন্তু।.... নীলিমা মেয়েকে চোখ রাঙ্গিয়ে বললো।
-এই তুমি আমাকে ভয় লাগাত্তো কেনো, আমি ভয় পাইনা ওকে..।
-নিধি এক্ষুনি পিটুনি দিবো আমি তোমাকে...।
--তোমাকে মাব্বো দে আ..... নিধি কথাটা শেষ করার আগেই টাস করে একটা পড়লো নিধির গালে, সবাই চমকে উঠে , অবাক হয় , এমন কিছু হবে ভাবতে পারেনি কেউই। মেয়ের কান্নার শব্দ শুনে নিলয় আর আসিফ ছুটে বসার ঘরে আসে।আসিফ আর নিলয়কে দেখে নিধির কান্নার গতি বেড়ে যায়।
-তাহিন নিধি মামুনিকে মেরেছো কেনো....?...তাপছিরা ছেলেকে ধমক দিয়ে জিজ্ঞেস করে।
-নাওমি মামুনির সাথে বেয়াদবি করেছে তাই মেরেছি , নাওমি সরি বল মামুনিকে।....সবাই নিধি বলে ডাকলেও তাহিন নাওমি বলে ডাকে নিধিকে।
তাপছিরা সহ বাড়ীর সবাই অবাক এইটুকু ছেলে কি না বেয়াদবি করার শাস্তি দিচ্ছে অন্যকে ভাবা যায়।
রেগে গেলো নিধি , ছেলেটা সবসময় তার সাথে এমন করে.।
-বব্বো না ছলি, তুমি পতা, বলপাপা তোমাল তেলে আমাকে মেলেতে এখানে..... -নিধি গালে হাত দিয়ে আসিফকে বলে।
ততক্ষণে তাহিন নিধির গালে আরেকটা থাপ্পর মেরে দেয়।
-তাহিন বেয়াদবি করছো কোন সাহসে....তাপছিরা ছেলেকে ধমক দিয়ে নিধির কাছ থেকে সরিয়ে আনে।আসিফ নিধিকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছে সেখান থেকে , ভাইয়ের পেছন পেছন গেলো নিলয়।
-সরি মাম্মা , ওকে ওর বেয়াদবির শাস্তি দিয়েছি শুধু।
-তাহিন.....?... তাপছিরা চিৎকার দিয়ে ছেলেকে মারার জন্য হাত তুলে ,বাড়ীর সবাই কেঁপে ওঠে , তিন কর্তি শুধু তাকিয়ে দেখছে , তারা ভাবতেই পারেননি তাহিন নিধির গায়ে হাত তুলবে।
-আপু ওর গায়ে হাত তুলছো কেনো ছোট মানুষ বুঝতে পারেনি , বুঝায় বললে তো হয়.....নীলিমা বোনের হাত ধরে বলে।
নীলিমার কথা শেষ হতে হতে তাহিন আবারো বলে উঠে...... - আমি ওকে বুঝেই মেরেছি মামুনি, তোমার সাথে বেয়াদবি করেছে তার শাস্তি পেয়েছে।
রাগে তাপছিরার সারা শরীর কাঁপছে , ছেলে সবার সামনে এমন করছে ব্যাপরটা মোটেও পছন্দের না তার।
-নীলু ওকে আমার সামনে থেকে নিয়ে য়া এক্ষুনি।
নীলিমা কিছু বলে না তাহিনকে নিয়ে চলে যায় নিজের রুমে।
রোকসানা বেগম, সাহেরা খাতুন, উম্মে সালমা সবাই তাপছিরাকে বোঝাচ্ছে ছোট মানুষ ভুল হয়েছে তার, এত বেশি রাগ না করতে , কিন্তু তাপছিরা কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না।
আসিফ আর নিলয় নিধিকে নিয়ে মাত্রই বাড়ীতে ঢুকেছে।
-কী হয়েছে বোনু, এখনো রেগে আছিস কেনো...।
তাপছিরা উত্তর দিলো না। তাহুরা এতক্ষণ একপাশে দাঁড়িয়ে ছিল , মা রেগে আছে, বাবাও নেই, ভাইয়্যু ও রেগে আছে, সে সাহস করে মায়ের কাছে যেতে পারেনি , সে গুটিগুটি পায়ে হেঁটে মায়ের কাছে আসলো, মায়ের হাত ধরা মাত্রই , মা হাত ছাড়িয়ে নিলো নিজের , উঠে সোজা রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিলো।
মা এভাবে চলে যাওয়াতে তাহুরা ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে উঠলো, বাবার কাছে গিয়ে বললো.....-পাপা আমি কিতু কলিনি, মাম্মা আমাল উপল লেগে আতে।
-কাঁদে না প্রিন্সেস,তোমার মাম্মারেগে নেই তোমার উপর ,মাম্মা একটু একা থাক, আমর একটু পর মাম্মা এর কাছে যাবো কেমন...?
তাহুরা কিছু বললো না বাবার বুকে পরে রইলো চুপ করে।
-পাপা আমাল একতা ভাই লাগবে....মেয়ের কথা শুনে নিলয় চোখ বড় বড় করে তাকালো।
-কেনো আম্মু তাহিন তো তোমার ভাই।
-না তাহিন তাহুলাল ভাই, সে আমাকে মালে, আমাল ভাই থাকলে ওকে মালবে, আমাকে মালবে না আল।
আসিফ অসহায় চোখে তাকালো ভাইয়ের দিকে , সে বুঝতে পারছে না ছেলেটা এমন করলো কেনো..।
নিলয় মেয়ের কথা শুনে জোরে হেসে দিলো... -বাহ্ বুদ্ধি আছে আমার প্রিন্সেসের।
বাবার হাসি দেখে নিধি নিজেও হাসে।
আসিফ মেয়েকে মায়ের কোলে দিয়ে নিজের রুমে যায়, তাপছিরা বারান্দায় বসে আছে।
-জান....?
আসিফের ডাকে ফিরে তাকালো না তাপছিরা, আসিফ পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো তাকে।
-তুমি কী এখনো তাহিন এর উপর রেখে আছো...?
-আমি রেগে নেই #মন্ত্রী_মশাই , আমি নিজের উপর লজ্জিত , মা হিসেবে ব্যর্থ আমি, আমি ভালো শিক্ষা দিতে পারলাম না হয়তো ছেলেকে।.....বলতে বলতে কেঁদে উঠে তাপছিরা।
আসিফ তাকে নিজের দিয়ে ঘুরিয়ে নিলো, চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বললো.....-এমন করে বলে না বউজান, তুমি একজন বেষ্ট মা, ছেলে-মেয়েকে তুমি ঠিক শিক্ষা টাই দিচ্ছো, আর কখনো এমন বলবে না, ছেলেকে বুঝিয়ে বলবো আমরা ঠিক আছে...?
তাপছিরা প্রতিউত্তর করলো না আসিফের কথার।
_______________
-নাওমি কী বেশি ব্যথা পেয়েছে...?
নাওমি মুখ ফিরিয়ে নিলো, তার মানে সে কথা বলবে না।
-নাওমি কী কথা বলবে না তাহিনের সাথে....?
-বব্বো না, তুমি পতা, আমাকে মেলেতো তুমি , আমি কথা বব্বো না তোমাল তাতে.....রাগে গজগজ করে বললো নিধি।
তাহিন হাসলো, ভীষণ রাগ মেয়েটার।
-আমি তোমাকে কেনো মেরেছি জানো....?
নিধি কিছু বললো না , ছেলেটা তাকে মেরে আবার বিরক্ত করতে এসেছে কেনো বুঝতে পারছে না নিধি।
-প্রথম থাপ্পরটা মেরেছি মামুনির সাথে বেয়াদবি করার জন্য আর দ্বিতীয় টা ওইদিন তিহান এর সাথে হেসে হেসে কথা বলার জন্য।
নিধি এবারও কিছু বললো না।
-আচ্ছা তাহিন এত্তগুলা সরি, আর মারবে না নাওমিকে, দেখি তাকাও এদিকে...।
সত্যিই নিধি তাকালো তাহিনের দিকে।
-আমার কথা শুনলে তোমাকে চকলেট দিবো আর কথার অবাধ্য হলে মাইর দিবো মনে থাকবে তো....?
নিধি মাথা নাড়ালো, মানে মনে থাকবে ওর।
তাহিন হেসে দিলো এবার....-এখন নাওমি হাসবে , তাহিন দেখবে নাওমিকে....।
নাওমি সত্যি সত্যি খিলখিল করে হেসে উঠলো সাথে তাহিনও।
-নিলয় আমি কিন্তু আমার ভবিষ্যৎ বউমা দেখতে পাচ্ছি ভাই।
--আমিও আমার ভবিষ্যৎ মেয়ের জামাই দেখতে পাচ্ছি ভাইয়া।
দুই ভাইয়ের কথা শুনে তাপছিরা আর নীলিমা হা হা করে হেসে দিলো। তারা এসেছিল ছেলে-মেয়েকে বুঝাবে বলে, এসে দেখে ছেলে-মেয়ে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া করে নিয়েছে।
হাসির শব্দ শুনে তাহিন সহসা পেছনে ফিরে তাকালো, পাপা, মাম্মা, মামুনি সবাইকে দেখে ছেলেটা কেমন লজ্জা পেলো, দৌড়ে চলে গেল সে।
তাপছিরা ছেলেকে দেখে অবাক না হয়ে পারছে না, সব বড়দের মতো কাজ তার ছেলের।
___________________
তাহিন মায়ের পেছন পেছন ঘুরছে সেই কখন থেকে, কিন্তু তাপছিরা ছেলেকে দেখেও না দেখার মতো নিজের কাজ করেই যাচ্ছে। সবাই হাসছে মা-ছেলের কান্ড দেখে। আসিফ ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে জোরে হেসে দিলো। তাহিন বাবার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললো.....
-তুমি হাসছো কেনো পাপা, মাম্মা রেগে আছে দেখছো না, আমার উপর থেকে রাগ উঠে তোমার উপর পরের গিয়ে।
আসিফের মুখটা চুপসে গেলো, ছেলে মিথ্যে কিছুতো বলছে না, তাপছিরা ঠোঁট চেপে হাসলো ছেলের কথা শুনে।
-ওওও মাম্মা তাহিন সরি তো, নাওমিকে মারবো না আর প্রমিজ , কথা বলো আমার সাথে , আচ্ছা নাওমির মতো তুমিও আমাকে মারো কিন্তু কথা বলো আমার সাথে...... তাহিন নিজের গাল এগিয়ে দিলো মায়ের দিকে।
রাগ পানি হয়ে গেলো তাপছিরার, ঝাপটে ধরলো ছেলেকে।
____________________
তাহিন, তাহুরা বেডের উপর হাত-পা ছড়িয়ে ঘুমাচ্ছে , তাদের দিকে গভীর নয়নে তাকিয়ে আছে তাপছিরা। এমন সময় রুমে আসলো আসিফ।
-এভাবে কী দেখছো বউজান....?
-আমাদের পূর্নতা #মন্ত্রী_মশাই...। তাপছিরা ওভাবেই বলে উঠে।
আসিফ ছেলে-মেয়ের কপালে চুমু খায়।
-চলো বারান্দায় বসি বউজান।
তাপছিরা বিনাবাক্যে উঠে দাড়ালো, আসিফ ঝট করে কোলে তুলে নিলো তাকে, কিছু বললো না তাপছিরা। আসিফ ওভাবেই তাপছিরাকে কোলে নিয়ে বসলো বারান্দার চেয়ারে।
-বউজান....?
-বলেন #মন্ত্রী__মশাই...।
-- ধন্যবাদ আমার জীবনে এসে আমাকে পরিপূর্ণ করার জন্য।
-- আপনাকেও ধন্যবাদ আমাকে পূর্নতা দেওয়ার জন্য। অনেক #ভালোবাসি_মন্ত্রী_মশাই....।
- #মন্ত্রী_মশাই_ভালোবাসে_তোমায় বউজান।
সমাপ্ত
(বি:দ্র: সম্পূর্ণ ভাবে কপি করা নিষেধ।)
(ভাই রে ভাই এই পার্ট টা লিখার সময় কিছুসময়ের জন্য মনে হচ্ছিল আমি নিজেই তাহুরা আর নাওমি....! 🤦♀️🫣)
0 Comments:
Post a Comment