গল্প তোর_ভালোবাসার_অপেক্ষায় পর্ব ২১
#তোর_ভালোবাসার_অপেক্ষায়
#পার্ট_২১
#লিখনিতে_Rodela_Islam
তমাল তুলিকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে যায়। খাওয়া দাওয়া শেষ করে তমাল তুলিকে বলে
--তমাল:: তুলি তুই গিয়ে গাড়িতে বস আমি বিল দিয়ে আসছি।
--তুলি:: আচ্ছা বলে গাড়ির দিকে যায়। কিছুক্ষণ পরে তমাল বিল দিয়ে গাড়ির কাছে এসে দেখে গাড়ি পুরো ফাঁকা তুলি নেই গাড়িতে। তুলিকে গাড়ি না পেয়ে আশে পাশে দেখে কারণ তুলি এর আগেও এমন করেছে। তমাল তুলিকে খুজতে খুজতে অনেকটা এগিয়ে গেছে কিন্তু তুলিকে কোথাও পাওয়া যায় না। এবার তমালের টেনশন হতে থাকে। তমাল আবার গাড়ির কাছে এসে তুলিকে ফোন করে কিন্তু তুলির ফোন গাড়িতে। তমাল কি করবে কিছু ভেবে পাচ্ছে না।
-তমাল পাগলের মতো এদিক ওদিক খুজতে থাকে তুলিকে বেশ কিছুক্ষণ খোঁজার পরে হঠাৎ একটু দূরে কিছু মানুষকে জরো হয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখে তমাল ঔদিকে এগোতে গিয়ে একটা লোককে জিজ্ঞেস করে ওখানে কি হয়েছে। লোকটা বলে এই খানে একটা অল্প বয়সি মেয়ের এক্সিডেন্ট হয়েছে। লোকটার কথা শুনে তমালের গলা শুকিয়ে যায়। সারা শরীর ঘেমে একাকার অবস্থা। তমালের পা কাপছে ভয় হচ্ছে খুব মনে মনে বলছে
--তমাল:: আল্লাহ ওই মেয়েটা যেনো তুলি না হয়। তুলির যেনো কিছু না হয়। এই দোয়া করতে করতে যেদিকে এগিয়ে যায়। এগিয়ে গিয়ে দাড়াতেই কেও একজন তমালের কাধে হাত রাখতেই তমাল পিছনে ঘুরে তাকায় ওর সামনে দাড়িয়ে থাকা মানুষটিকে দেখে এক সেকেন্ড দেড়ি না করে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে
--তমাল:: কোথায় গিয়েছিলি তুই কেনো আমাকে না বলে গিয়েছিলি একটাবার ভাবলিনা আমার চিন্তা হতে পারে। কেনো এমন করিস জানপাখি আর একটু হলে আমার জানটাই বেরিয়ে যেতো ( কান্না ভেজা কন্ঠে )
--তুলি কিছুক্ষন নিশ্চুপ থেকে তমালকে নিজের থেকে ছাড়িরে তমালের গাল বেয়ে পরা চোখের পানি দু হাতে মুছে দিয়ে দু হাত তমালের গালে রেখে বলে
--তুলি:: এমন বাচ্চাদের মতো কাদছো কেনো। আমার তো কিছু হয় নি। দেখো আমি তোমার সামনে দাড়িয়ে আছি।
তমাল তুলির দুহাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে
--তমাল:: তোর কিছু হয় নি তো ঠিক আছিস তো তুই। কোথাও ব্যাথা পারনি তো...??
--তুলি:: আমি ঠিক আছি তুমি শান্ত হও আগে প্লিজ।
--তমাল:: তুই কোথায় গিয়েছিলি তোকে খুজতে খুজতে এখানে এসেছি এসেই শুনতে পায় একটা মেয়ে এক্সিডেন্ট করেছে। তোর কিছু হলে আমি মরেয় যেতাম।
--তুলি:: আমি তো একটা বেলুন বিক্রেতা পেছন পেছনা এখানে চলে এসেছি লোকটাকে কত ডাকলাম শুনতেই পায় নি আর এতো দূর এসে দেখি এই অবস্থা আমি আবার ফিরে যাচ্ছিলাম তখন তোমাকে দেখি।
--তমাল:: তুই কেনো আমাকে এতো চিন্তায় ফেলিস বলতো......??
--তুলি:: আমি কি করে জানবো এতটুকুতেই তোমার এই অবস্থা হবে। তা মি: তমাল তুমি না বলেছে আমি মরে গেলোও তোমার চোখ দিয়ে এক ফোটা পানিও পরবে না। তাহলে আজ এই অবস্থা কেনো তোমার।
--তমাল:: সেদিন আমি ভুল বলেছিলাম কারণ তখনো আমি তোকে ভালোবাতাম না। ভালোবাসা যে একটা মানুষকে এতোটা পরিবর্তন করতে পারে আমি ভাবতেও পারি নাই।
--তুলি:: কিন্তু মি: তমাল আমি কিন্তু আজ যিতে গিয়েছি আমি বলেছিলাম আমায় ভালোবেসে তোমাকে কাদতে হবে। দেখেছো তুমি আমার জন্য ঠিকই কাদলে। কিন্তু এতো কোনো লাভ হবে না আমি তোমাকে এতো তাড়াতাড়ি আমার ভালোবাসা দিবো না।
--তমাল:: তোর যা ইচ্ছে তাই কর কিন্তু আমায় ছেড়ে যাস না কোথাও তাহলে আমি বাঁচতে পারতো না আমি।
--তুলি:: না আমি তোমায় ছেড়ে কোথাও যাবো আর না তোমাকে যেতে দিবো কিন্তু তোমাকে একটু কষ্ট ভোগ করাবো এই আর কি।
--তমাল:: আচ্ছা চল বাড়ি ফেরা যাক অনেক রাত হয়ে গেছে।
--তুলি:: তমাল ভাই আমার না পায়ে ব্যাথা করছে এতো দূর হেটে এসে আমি আর হাটতে পারবো না।
(তমালের গলা জড়িয়ে ধরে নরম স্বরে বলে ) আমাকে কোলে তুলে নিয়ে যায়।
--তমাল:: কেনো একা একাই তো হেটে এসেছিস তখন। আর আমাকে কষ্ট দেওয়ার সময় মনে ছিলো না এখন হেটেই যাবি।
--তুলি:: ঠিক আছে তুমি আমায় কোলে করে না নিয়ে গেলে আমি যাবো না এখানেই বসে থাকবো।
--তমাল আর কিছু বলে না করণ তুলি একবার বলেছে মানে ওকে কোলে করে না নিয়ে গেলে ও এখান থেকে এক পাও নরবে না। তমাল তুলিকে কোলে নিয়ে গাড়ির কাছে আসে।
তমাল তুলিকে গাড়িতে বসিয়ে নিজে ড্রাইভিং ছিটে গিয়ে বসে গাড়ি স্টাট দেয়। তুলি কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে ওঠে
--তুলি:: আচ্ছা তমাল ভাই আজ যদি ওই মেয়েটার জায়গায় আমি থাকতাম তাহলে কেমন হতো।
তুলির কথাটা তমালের কানে প্রেবেশ মাত্র তমাল গাড়ি ব্রেক করে তুলির দিকে তাকায়
--তমাল:: চুপ এসব কথা বলবি না একদম।
--তুলি:: বলো না কি হতো.....??
--তমাল:: বিশ্বাস কর জানপাখি তোর কিছু হলে আমি মরেয় যেতাম। তমালের দু চোখ লাল হয়ে গেছে পানি টলমল করছে।
--তুলি:: ইশশশ কি ভালোবাসা। এই ভালোবাসা কোথায় ছিলো এতো দিন যখন প্রতি রাতে একা একা যন্ত্রণায় ছটফট করতাম। মাঝে মধ্যে ইচ্ছে হতো মরে যাই। কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়েছি। তখন কোথায় ছিলো এই ভালোবাসা..?
--তমাল তুলির হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে
--তমাল:: মাফ করে দে জানপাখি আমি বুঝতে পারিনি তোর ভালোবাসা। আমার সবসময় হিংসা হতো তোর উপর কারণ আমি ওই বাড়ির বড় ছেলে হওয়ার পরও আমার থেকে তোকে সবাই ভালোবাসতো তাই তোর উপর খুব রাগ হতো তোকে কষ্ট দিতে ভালোলাগতো। কিন্তু এই কষ্ট দিতে দিতেই যে তোকে ভালোবেসে ফেলবো আমি ভাবতে পারি নি। প্লিজ মাফ করে দে আমায়।
--তুলি:: মনে আছে তোমার আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য কি কি করেছিলে তুমি। জানো সেদিন যখন আশা আপু তোমাকে জড়িয়ে ধরেছিলো তখন আমার মনে হচ্ছিল আমার কলিজাটা কেও ধারালো ছুরি দিয়ে ক্ষত বিক্ষত করছে। এক মুহূর্তের জন্য মনে হচ্ছিল আমি এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু পরে ভেবে দেখলাম আমি কেনো মরবো তোমার জন্য আমি মরে গেলোও তখন তোমার কিছু হতো না তাই মরেতে গিয়েও মরি নাই। একবার ভেবে দেখেছো এগুলো।
--তমাল:: হ্যাঁ এটা সত্যি সেদিন তোকে কষ্ট দিতেই আমি ওকে জড়িয়ে ধরে ছিলাম কিন্তু ওকে আমি বন্ধু ছাড়া অন্য কিছু ভাবতাম না ।
--তুলি:: যা হওয়ার হয়েগেছে। এখন এতো কিছু বলে কি হবে আমার সিদ্ধান্ত চেজ্ঞ করতে পারবো না আমি।
--তমাল:: তোকে সিদ্ধান্ত চেজ্ঞ করতে হবে না তুই আমার কাছে থাকলেই হবে। এই কদিনে আমি বুঝেছি তোকে না দেখে কথা না বলে থাকা অসম্ভব আমার কাছে। তাই তুই যতো কষ্ট দেওয়ার দিস কিন্তু দূরে যান না আমার থেকে।
--তুলি:: সে দেখা যাবে এখন বাড়ি চলো। তমাল আবার গাড়ি চালানোতে মন দেয়।
--তুলি:: মনে মনে বিরবির করে বলে তোমার কষ্ট যে আমি সহ্য করতে পারি না তমাল। কিন্তু কি করবো বলো তুমি তো ইচ্ছে করে আমাকে কষ্ট দিয়েছো আমি তোমাকে ভালোবাসি বলে যেভাবে খুশী আঘাত করেছে এবং আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য তুমি যা যা করেছো তা কি করে ভুলবো তাই একটু কষ্ট তোমাকেও দিবো আমি।
আরো কত কি ভাবতে ভাবতে গাড়িতে ঘুমিয়ে গেছে তুলি। তমাল তুলির দিকে তাকিয়ে দেখে তুলি ঘুমিয়ে গেছে। তমাল তুলিকে নিজের কাছে এনে এক হাতে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে আর এক হাতে গাড়ি চালাচ্ছে। তমাল বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামিয়ে নেমে তুলিকে কোলে তুলে নিয়ে বাড়িতে যায়। তুলিকে তুলির রুমে শুইয়ে দিয়ে দু গালে আলতো আদর দিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।
( যাদের আমার গল্প পরতে ভালোলাগে তারা আমার মেন আইডিতে গিয়ে লাইক কমেন্ট সেয়ার করবে। আর পরের পার্বটি সবার আগে পেতে ফলো করে রাখুন। ধন্যবাদ। )
#চলবে
#ভুল_ত্রুটি_মার্জনীয়
#তোর_ভালোবাসার_অপেক্ষায়
#রোদেলা_ইসলাম
No comments