গল্প মহীপতি পর্ব ১৫
#মহীপতি👑
#লামিয়া_রহমান_মেঘলা
#পর্ব_১৫
সন্ধ্যার পর।
হৃদি নিরিবিলি ঘুমিয়ে আছে। শরীরে তার সুতার টুকরো নাই।
গায়ে কম্বল টানা।
এত বেশি টায়ার্ড যে মন চাইল না জামাটা পরতে।
তবে আরহামের ইচ্ছে থাকলে ঠিকই হৃদিকে কিছু পরিয়ে দিত। আরহাম চায়নি হৃদিকে কিছু পরাতে। এভাবে দেখতে ভীষণ ভালো লাগছে তার হৃদিকে। ( কি পাজি দেখেছো নায়ক)
আরহাম হৃদির পাশে বসে আছে।
হৃদির মায়াবী মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
হৃদির মুখে হাত দিয়ে স্লাইড করে ওর ঠোঁটে হাত রাখে।
হৃদির কোন নড়চড় নাই।
" মায়াবী। ভীষণ মায়াবী। এই মায়া আমাকে আঁটকে ধরে রেখেছে।
এই মায়ার আগুনে জ্বলে যাচ্ছি আমি।
তুই আমার জান। শুধু আর কেবল মাত্র আমার। "
আরহাম হৃদির কপালে চুমু খায়।
আরহামের ঠোঁটের স্পর্শ কাঁপলে পড়তে হৃদির চোখ খুলে যায়।
পিটপিট করে আরহামের দিকে তাকায়।
আরহাম মৃদু হাসে।
হৃদিও হাসে।
হৃদির হাসি মাখা গালে চুমু খায় আরহাম।
এমন সময় দরজা নক এর শব্দে হৃদি ফিরে তাকায়।
হৃদি নিজের অবস্থা বুঝে বেশ লজ্জা পায়।
" জান একটু দেখুন কে। "
আরহাম বিছনা ছেড়ে উঠে দরজা হালকা খুলে।
মিরা দাঁড়িয়ে।
মাথাটা হালকা বের করে জিজ্ঞেস করে,
" কি? "
" এত রুড কেন ভাইয়া আপনি? হৃদি কই? চলুন ঘুরে আসি কালত চলে যাবেন। "
" এখনত প্রায় সন্ধ্যা হতে চলল। "
" আপনি গাড়ি এনেছেন সেটা করেই ঘুরব চলুন। "
" ওকে। "
" আমাকে ভেতরে যেতে দিন। "
আরহাম পেছনে ফিরে।
হৃদি জামা নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেছে।
আরহাম দরজা ছেড়ে দেয়।
মিরা ভেতরে চলে আসে।
চারিদিকে চোখ বুলায়।
হৃদিকে কোথাও না দেখে মনে মনে একটু খুশি হয়।
মিরা হৃদির আয়নার দিকে তাকায়।। সেখান থেকে আরহাম কে দেখা যাচ্ছে।
বসে বসে ফোন টিপছে সোফায় বসে।
মিরার ওড়না যদিওর এক পাশে ছিল। ওড়নাটা ওরগানজা ফ্যাবরিকের।
বাতাস পেলেই উড়ে যাবে। এমনিও ওর শরীরে ভালো থাকছে না।
মিরার জামার গলাটা অনেকটা ডিপ। নিচু হলেই সব বুঝা যাবে।
মিরা ইচ্ছে করে পাশের জানালটা খুলে দেয়।
এতে করে বাইরে থেকে উত্তরে হাওয়া এসে মিরার ওড়ানাটা আরহামের কাছে নিয়ে ফেলে।
মিরা হাসে।
আরহাম এক নজর ওড়নার দিকে তাকায়৷
এরপর আবার নিজের ফোনের দিকে তাকায়।
মিরা এবার পেছন ফিরে আরহামের দিকে এগিয়ে এসে।
আরহামের দিকে ঝুকে যায়।
আরহাম সোজা মিরার দিকে তাকায়।
ওর ঝুকার ফলে ভেতর থেকে প্রায় সব টুকুই দেখা যাচ্ছে।
আরহামের কিছু বলার আগেই পেছন থেকে কেউ মিরাকে ওড়না পরিয়ে দেয়।
" মিরা ওড়না সামলে। "
মিরা পাশে তাকিয়ে দেখে হৃদি।
" ও হৃদি কখন এলি। তোর অপেক্ষায় ছিলাম। "
" আমার অপেক্ষায় ওড়না ছেড়ে আমার বরের দিকে ঝুকে থাকার যুক্তি টা বুঝলাম না ঠিক। "
মিরা এবার থতমত খেয়ে ঠিক কি বলবে বুঝতে না পেরে বলে,
" হৃদি চল আমরা বাইরে যাই। ঘুরতে। তোরাগ কাল চলে যাবি তাইনা? "
" তুই যা আমরা আসছি। "
মিরার মুখ ভার হয়ে যায়।
সে চুপচাপ সেখান থেকে চলে যায়।
আরহাম বসে বসে হৃদিকে দেখছিল।
হৃদির সব কাজ পর্যবেক্ষণ করছিল।
ওর উপর একটু হলেও দুর্বল হৃদি এটা সিওর হলো আরহাম।
"যেতে চান কোথাও?"
" তুমি যেখানে নিয়ে যাবে আমি সেখানেই যাব। "
" বাবা মহীপতি এখন আমার কথা শুনে চলবে?"
" মহীপতি হন বা মজদুর হন ঘরে এসে বউ দের কথাই সব। "
হৃদি মিষ্টি হাসি দেয়।
" ঠিক আছে জান উঠুন৷ "
হৃদি আয়নার সামনে এসে চুল গুলো আচড়ে নেয়।
হালকা লিপস্টিক দিয়ে নেয়।
এখানে আসার সময় আরহামের হাতে মিসেস খান একটা জুয়েলারি বক্স দিয়েছিল।
সেটা আরহাম ওকে এখানে আসলে দিয়েছে।
নতুন বউকে খালি করে পাঠালে কি রকম লাগবে। তাই নিজের থেকে ভালো ডিজাইনের কিছু গয়না দিয়ে দিয়েছে।
হৃদি ভাবে একটা মানুষ কতটা ভালোবাসলে সব দিয়ে খেয়াল রাখতে পারে।
মিসেস ইউন -সুহ বাংলাদেশের নয় কিন্তু উনি অসম্ভব ভালো একজন মানুষ।
হৃদি কিছু হালকা গয়না পরে নেয়।
বাইরে গেলে গ্রামের মানুষ সবাই দেখবে নতুন বউ কি পরে আছে।
হৃদি শাড়িটা ঠিক করে চুলটা সামনে থেকে বেঁধে নেয়।
আরহাম সার্টের উপর জ্যাকেট পরে নেয়।
জ্যাকেট পরে সামনে তাকায়।
কি অপরূপ দেখাচ্ছে এই মেয়েটাকে।
এটা নাকি তার বউ।
বাসন্তি রঙের শাড়ি।
এত মায়াবী কেন দেখাচ্ছে।
আরহাম হৃদির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
হৃদি ও আরহামের দিকে তাকায়।
" এভাবেই সেজে থেকো সুন্দর লাগে।, "
"ঠিক আছে। "
হৃদি আরহাম কে নিয়ে বাইরে চলে আসে।
মিরা সেখানে দাঁড়িয়ে আছে।
ওদের এত ক্লোজ নেস মোটেই সহ্য হচ্ছে না মিরার।
তবে বলার কিছু নাই।
" চল মিরা। "
সবাই গাড়িতে ওঠে।
আরহাম ড্রাউভ করছে হৃদি পাশে আর মিরা পেছনে।
,
,
,
,
ডাউন্ট ট্রাউন রেস্টুরেন্টে,
একটা ৫ তারকা রেস্টুরেন্টে + হোটেল।
সেখানের এক পাশে রোজি আর ইরফান বসে আছে।
সামনে বেশ বড় লোকি কিছু খাবার৷ তবে তাতে ঠিক স্বাদ আছে কিনা বলা মুসকিল।
" মি,. ইরফান খান আপনার প্লান ত সাকসেস।
তবে এখন কিছু করতে পারছেন না কেন?"
" দেখুন মিস রোজি এখন যদি আমি কিছু তাড়াহুড়ো করে করতে যাই তাহলে সেটা হবে আপনার সৌন্দর্যের মত ক্ষণস্থায়ী।
তবে আমি যদি ধিরে ধিরে স্টেপ ফেলি তবে সেটা হবে হৃদির সৌন্দর্যের মত দীর্ঘস্থায়ী।, "
" এসবের মানে কি মিস্টার ইরফান৷ "
" তেমন কিছু নয় ম্যাডাম প্লিজ আপনি উত্তেজিত হবেন না। "
ইরফান ওয়াইন এর গ্লাস টা হাতে নিয়ে খেয়ে নেয়।
" আমাদের একটু এডভান্স ভাবতে হবে। "
" কি রকম?"
" খবর পেয়েছি আরহাম, আর হৃদি গ্রামে ঘুরতে বের হয়েছে। "
" এসব খবর আমাকে দিবেন না বিরক্ত লাগে।"
" এত জলদি হার মানলে হবে ম্যাডাম। খেলাত এখানে শুরু। "
" খেলা শুরু মানে?"
" আমি জারিফ কে কল করেছি। ( এই ছেলেটার নাম যে কি ছিল জাহিন না জারিফ ভুলে গেছি। দয়া করে জরিফ ধরে নিও) "
" জারিফ কি করবে?"
" জারিফ কিছুই তেমন করবে না তবে আমার কথা মত দরুন একটা বম ফুটাবে। "
" আপনার মাথায় ঠিক কি চলছে ইরফান?"
" আপনি বুঝবেন না মিস রোজি। এই ট্যুর থেলে আসার পর আরহামের সঙ্গে একটু চিপকে থাকবেন প্লিজ। "
" সেটা আর বলতে। "
,
,
,
,
আরহাম হৃদির এবং মিরাকে নিয়ে একটা ব্রিজে এসেছে।
এখানে মেলার মড হচ্ছে।
হৃদি বেশ অনেক দিন পর এখানে এসে অনেক খুশি হয়েছে।
" চলুন সামনে চলুন। "
" না সামনে যাব না৷ তুমি গিয়ে ঘুরে দেখো। কিছু লাগলে এই নেও ওলেট কিনে নিও। "
" কিন্তু। "
মিরা ওয়ালেট দেখে হৃদির হাত ধরে সামনে নিয়ে আসে,
" আরে আরে বর দিয়েছে তুই রাখবি না কেন? চল দেখি কিছু আছে নাকি। "
হৃদি আসলে এসব পছন্দ করেনা।
তার পরেও মিরা জোড়াজুড়ি করছে বলে আর কিছু বলল না।
" এই দেখ চুড়ি। "
" নিলে নে মিরা৷ "
" ও মা তুই নিবি না? "
" আমার অনেক আছে তুই নে। "
" প্লিজ আমি নিব তুইও নে। "
" আচ্ছা আচ্ছা। দিন দু সেট দিন৷ "
লোকটা প্যাকেট করে দেয় হৃদি পে করে দেয়।
আরহাম ফোনে কিছু কাজ করছিল।
সামনের দিকে খেয়াল করা হয়নি।
হৃদি মিরার সাথেই ছিল এমন সময় সেখানে জারিফ এসে হৃদির হাত ধরে বসে।
হৃদি হটাৎ ভয় পেয়ে যায়।
" এ কি জারিফ আমাকে ছাড়ুন। "
" না ছাড়ব না। হৃদি তুমি চলো আমরা পালিয়ে যাই। "
" পালিয়ে যাই। মানে কি। ছাড়ো জারিফ আরহাম দেখলে তোমাকে খুন করে ফেলবে।"
" না না আমি জানি আরহাম তোমায় জোর করেছে চলো পালিয়ে যাই চলো। "
" ছাড়ো জারিফ বেশি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু। "
" না চলো আমার সাথে তুমি চলো। "
" না যাব না৷ ছাড়ো। মিরা হেল্প। "
মিরা এতক্ষণ তাকিয়ে থাকলেও হৃদির কথা শুনে বলে,
" আব।। জারিফ ছাড়ো। "
" ছাড়ুন জারিফ৷ কি করছেন?"
জারিফ হৃদিকে টেনে অন্য দিকে নিয়ে যেতে লাগে।
হৃদি আরহামের নাম ধরে চিল্লাতে গেলে হৃদির মুখ চেপে ধরে।
মিরা সবটা দেখেও চুপ হয়ে থাকে।
কিছু বলেনা।
মিরা সয়তানি হাসি হাসে।
আরহাম ফোন কেটে সামনে তাকিয়ে দেখে হৃদি নেই।
তবে মিরা আছে।। আরহাম অবাক হয়ে যায়।
দ্রুগ পায়ে মিরার কাছে চলে আসে,
" পদ্মা কোথায়? "
" হৃদি। আসলে আমি জানিনা অনেক চেষ্টা করলাম। কিন্তু জানেন হৃদি বলল আপনি ওকে জোর করেছেন। আর দেখুন জারিফের সঙ্গে ওই দিক টায় দৌড়ে গেল। "
" দৌড়ে গেল মানে। তুমি আটকালে না কেন?"
" আমিত বুঝতে পারছিলাম না কি হলো।
হৃদিকে থামাতে গেলে বলল। আমাকে ঠেকাস না। আরহাম আমাকে জোর করে বিয়ে করেছিল। এটাই সুযোগ। আমাকে ঠেকাস না৷ "
আরহামের ফর্সা মুখ লাল বর্ণ ধারণ করে মুহুর্তে।
মিরাকে ইচ্ছে করছে কসিয়ে থাপ্পড় মারতে।।
আরহাম দ্রুত গাড়িতে উঠে সেই দিকে আগ্রসর হয়।
,
হৃদি নিজেকে ছাড়াতে চাইছে তবে জারিফ কেমন পাগলের মত হৃদিকে ধরে রেখেছে।
জারিফ একটা গাড়ি হায়ার করেছে।
হৃদিকে সামলাতে না পেরে হৃদির মাথার পেছনে মদের বোতল দিয়ে আঘাত করে।
হৃদি সেন্স হারায়।
চলবে?
No comments