1t/Banner 728x90

গল্প মহীপতি পর্ব ১৩

 #মহীপতি👑

#লামিয়া_রহমান_মেঘলা

#পর্ব_১৩

সারা দিনে আরহাম খানের দেখা মিলল না খান বাড়িতে। 

মনটা ভীষণ খারাপ হৃদির। 

বুকের ভেতর কষ্ট হচ্ছে। 

এই কষ্ট কেন হচ্ছে। কি কারণ হৃদি জানেনা৷ 

কিন্তু আরহামের সম্পর্কে সব কথা শোনার পর হৃদির ভেতর টা কেমন করছে। 

হৃদি নিজের হাতের দিকে তাকায়। 

এখানে একটা আংটি আছে। 

যেটা দেওয়া আরহামের। 

হৃদি তাদের প্রথম থেকে এই পর্যন্ত সব কিছু কল্পনা করে তাহলে  দেখা যাবে সব কিছুই নিয়তি। 

হৃদি কখনো এমন একটা জীবন চায়নি যেখানে হৃদিকে বন্দির মত জীবন কাটাতে হবে। 

এটা একটা সোনার খাঁচা। 

কিন্তু এই মহীপতির রানি হওয়াটা অনেক দুর রাস্তা অতিক্রম এর ব্যাপার। 

হৃদির চোখের সামনে কিছু ফ্লাসব্যাক আসে,

অতীত, 

এসএসসি পরিক্ষার পর হৃদি ভালো রেজাল্ট করে। 

রেজাল্ট এর ম্যাসেজ টা দেখে হৃদি দৌড়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে,

" বাবা বাবা বাবা আমি পেরেছি৷ তোমার মেয়ে কত ভালো রেজাল্ট করেছে দেখো।"

আজিজ রহমান মেয়েকে জড়িয়ে নেয় বুকে,

" আমি ত জানতাম আমার মেয়ে বলে কথা আমার হৃদি। ভালো রেজাল্ট হৃদি করবেই। "

" আমি অনেক খুশি বাবা। "

" আমিও অনেক খুশি। এই খুশির মুহুর্তে আমার মেয়ে কি চায়৷ বল মা আজ যা চাইবি তাই দেব। বল। "

" বাবা সবাইকে মিষ্টি খাওয়াও আর আমাকে ভালো কলেজে ভর্তি করবা। "

" তা ত অবশ্যই। আমার মেয়েটা। "

হৃদি বাবাকে জড়িয়ে ধরে,

" দেখো বাবা এক দিন অনেক বড় ইঞ্জিনিয়ার হবো। "

" আমিও তাই চাই মা৷ তুই অনেক বড় হ৷ সব স্বপ্ন তোর পূর্ণ হোক। "

হৃদি বাবাকে জড়িয়ে রাখে। 

জীবনের সোনালী দিন গুলোর মাঝে ওই দিন গুলো কতই না মধুর ছিল। 

" ম্যাম। "

কারোর কন্ঠ শুনে হৃদি অতীত থেকে বেরিয়ে আসে। চোখের পানি মুছে পাশে তাকায়। একজন মেড দাঁড়িয়ে। 

" কি হয়েছে?"

" স্যার আপনাকে রুমে নিয়ে যেতে বলেছে।"

" কেন স্যার এর বউ স্যারকে বলুন৷ আপনার বউ আপনি নিয়ে জান আমি পারব না৷ "

" কিন্তু ম্যাম স্যার রাগ হয়ে যাবে। "

" না রাগ হবেনা তুমি গিয়ে শুধু বলো। আপনার বউ আপনি নিয়ে আসেন৷ "

কথাটা বলে হৃদি বিছনার উপরে রাখা কম্ফোর্ট জড়িয়ে শুয়ে পরে। 

মেড পড়েছে বিপাকে। 

মেড ভয়ে ভয়ে আরহাম কে গিয়ে বলে,

" স্যার ম্যাম ত অসুস্থ। "

" এই জন্য তোমাকে পাঠিয়েছিলাম। "

" ম্যাম৷ বলল তিনি হাঁটতে পারবেন না। "

আরহাম মেড এর দিকে তাকায়। 

হাত থেকে লাল তাজা গোলাপ গুলো বিছনায় রাখে। 

" তুমি যাও। "

মেড চলে যায়। 

আরহাম হৃদির রুমের দিকে হাঁটা ধরে। 

রুমে এসে দেখে হৃদি চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। 

আরহাম হৃদিকে কিছু না বলে ওকে পাজকোলে তুলে নেয়। 

হৃদি আরহামের সার্ট খামচে ধরে । 

আরহাম সোজা হৃদিকে নিয়ে রুমে চলে যায়। 

হৃদিকে বিছনায় বসিয়ে হৃদির সামনে হাটু ভাজ করে বসে। 

কিছু তাজা তাজা গোলাপ এনেছে হৃদির জন্য। 

সেগুলো হৃদির হাতে দেয় আরহাম। 

হৃদি গোলাপ দেখে খুশি হয়ে যায়। 

আরহাম হৃদির মুখটা নিজের হাতের মাঝে নিয়ে নেয়। 

" কাল সকালে রেডি থেকো আমরা তোমার গ্রামে যাব। "

হৃদির চোখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।

" সত্যি? "

" হ্যাঁ। ব্যাগ গুছিয়ে নেও। "

হৃদি আরহাম কে জড়িয়ে ধরে। 

আরহামও হৃদিকে জড়িয়ে নেয়। 

" ধন্যবাদ। আমি অনেক খুশি। "

" হুম.. "

হৃদি, আরহাম কে ছেড়ে দেয় লজ্জা পেয়েছে মেয়েটা। 

" মিসেস আরহাম খান। আমরা কাল যাব এবং পর্শু দিন আমার সঙ্গে আপনাকে ফেরত আসতে হবে। রাজি?"

হৃদির মনটা যদিও মাত্র এক দিন থাকার কথায় খারাপ হয়ে যায় তাও সে বলে 

" ঠিক আছে। "

" এখন বলো খাও নি কেন?"

" খেয়েছি। "

" না তুমি খাও নি। কাল তোমার শরীর অসুস্থ ছিল আজ কেন খাও নি?"

" আপনি সারা দিন বাসায় আসেন নি কেন?"

" পদ্মা। "

আরহাম হৃদির হাত দুটোকে নিজের হাতের মাঝে নিয়ে নেয়, 

" তোমার স্বামী একজন মাফিয়া লিডার। সাথে ৩৪ টা কোম্পানির মালিক। কোরিয়া,  জাপান, ফ্রান্স লস এঞ্জেলস এ আমার দায়িত্ব থাকে। সব সময় আমাকে নিজের জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়। আমার অনেক শত্রু। ঘরের বাইরে এবং ঘরে। 

আমি সব সময় এভেলএবেল থাকতে পারব না৷ 

বাকি ৫ জন স্বামীর মত। এর মানে এই নয় যে তুমি  না খেয়ে থাকবে। "

" আর ৫ জনের মত কেন হতে পারবেন না? "

" পারব না তাই পারব না। "

হৃদি আরহামের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। 

আরহাম হৃদির চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারছে না। 

সে চোখ সরিয়ে নেয়। 

হৃদিকে খাবার খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দেয় আরহাম। 

ঔষধ খাওয়ার পর হৃদি ঘুমিয়ে যায়। 

কথায় আছে বিয়ের অনেক জোড় আছে। 

কবুল বলার পর স্বামী স্ত্রী কে এব স্ত্রী স্বামীকে স্বীকার করে নেওয়ার পর উপর থেকেই অদৃশ্য এক গিট পড়ে যায়  দুটো মানুষের মাঝে। 

সেই গিটের জন্য ভালোবাসার জন্ম হয়। 

ভালোবাসা থেকে দায়িত্ব। সেখান থেকে পজেসিভনেস। সেখান থেকেই সব। 

আরহাম হৃদির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। 

নিজের উপর নিজের রাগ হচ্ছে। সে দিন রাগের মাথায় মেয়েটাকে কেন বিয়ে করে এনেছিল। 

সে দিন যদি নিজের সঙ্গে হৃদিকে না জড়াত তাহলে হয়ত আজ হৃদির জীবনের ঝুকি থাকত না। 

হৃদির মায়াবী ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে আরহাম। 

" ভুল ছিলাম আমি। 

I was totally wrong. 

আমি ভাবতাম আমাদের জীবনে ভালোবাসা হারিয়ে গেলে আর পাওয়া যায় না। আরহাম খানের কোন দুর্বলতা নেই যাকে দিয়ে তার শত্রুরা তাকে আঘাত করবে। 

আমি ভুল ছিলাম। সত্যি আমি ভীষণ ভুল ছিলাম। 

অনেক বড় বড় কথা বলেছি এখন আমার দুর্বলতা আমার সামনেই ঘুমিয়ে আছে।  "

আরহাম হৃদির কপালে চুমু দেয়। 

আরহাম হৃদিকে দেখেই সারাটা রাত কাটিয়ে দেয়। 

,

,

,

সকাল বেলা ব্রেকফাস্ট টেবিলে  মিসেস ইউন -সুহ বসে কিছু ভাবছিলেন। 

তাকে ভাবতে দেখে মিস্টার খান বলেন,

" জাগি কি ভাবছো?"

" ভাবছি আমি কি সত্যি অনেক বেশি অসুন্দর ছিলাম।"

" জাগি তুমি পৃথিবীতে সেরা সুন্দরী। "

" তাহলে তুমি সাইমার ( সাইমা ইরফানের মা অর্থাৎ মিস্টার খান এর দ্বিতীয় স্ত্রী) বাড়িতে এখনো কেন যাও?"

মিস্টার খান কিছুটা ঘাবড়ে গেলেন। 

" ম মানে। আমিত যাইনা তুমি জানো তুমি কোরিয়া থেকে আসার পর আমি সাইমার সঙ্গে কোন যোগাযোগ রাখিনি। "

মিসেস ইউন -সুহ স্বামীর দিকে তাকান। 

" জাগি আমি তোমার ভালো চাই সব সময়। আমার কাছে সব প্রমাণ আছে। 

দেখো জান আমি চাইনা আরহাম কে এসব বিষয় বলতে। তুমিত জানো তোমার ছেলেকে। "

মিস্টার খান বুঝতে পারেন তার স্ত্রী বিশেষ কোন মতলবে তাকে এসব বলছেন। 

" দেখো জান আমি চাই না রোজিকে কাল সকালে এ বাড়িতে দেখতে। কিভাবে ম্যানেজ করবা তুমি জানো। আমার ছেলের জীবনে আর অশান্তি আমি দেখতে চাচ্ছি না। 

আমার ছেলে আর যাই হোক তোমার মত চরিত্র হীন  নয়। 

নিজেকে সামলাও। আরহাম কে যেন আমার এসবের খবর না দেওয়া লাগে। "

মিসেস খান খাবার টেবিল ছেড়ে উপরে চলে আসেন। 

মিস্টার খান সামনের খাবার ছুড়ে ফেলে মেঝেতে। 

" যেমন মা তেমন ছেলে। আমার জীবন অস্থির করে ছাড়ল। উফ এখন আমি রোজির বাবাকে কি বলব...। ইউন-সুহ তুমি আমাকে বরবাদ করে দেবে। "

,

,

মিসেস ইউন -সুহ আয়নার সামনে বসে আছেন। 

তার বয়স দেখলে মনে হয়না সে এত বয়সী একজন মহিলা। 

" তোমায় আমি এত ভালোবাসা দিয়েছি হয়ত পৃথিবীতে আর কাউকে এত ভালোবাসা দিতে পারব না৷ কিন্তু তুমি আমাকে যেভাবে ঠকিয়েছো তারপর আমি বুঝতে পেরেছি নিজেকে ভালোবাসা ভীষণ জরুরি৷ নিজেকে না ভালোবাসলে পৃথিবীতে অন্য কেউ আপন হয়না। 

তুমও এত বছর পর আবারো আমার ছেলের সঙ্গে একই ভুল করতে চাইছো। কিভাবে ক্ষমা করি তোমাকে?  "

...

নারী বড় অদ্ভুত একবার মন ভেঙে গেলে পুরুষের হাজার পরিকল্পনা তা জোড়া লাগাতে পারেনা৷ 


চলবে?


No comments

Powered by Blogger.