1t/Banner 728x90

গল্প দায়িত্বের_সংসার পর্ব ১৪

 #দায়িত্বের_সংসার

#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)

#পর্বঃ১৪ 

.

.

তুমি বরং কুকুর পোষো,

প্রভুভক্ত খুনসুটিতে কাটবে তোমার নিবিড় সময়,

তোমার জন্য বিড়ালই ঠিক,

বরং তুমি বিড়ালই পোষো

খাঁটি জিনিস চিনতে তোমার ভুল হয়ে যায়

খুঁজে এবার পেয়েছ ঠিক দিক ঠিকানা


 সোনা, এখন তুমি বিড়াল এবং কুকুর পোষো

শুকরগুলো তোমার সাথে খাপ খেয়ে যায়,

কাদা ঘাটায় দক্ষতা বেশ সমান সমান।

ঘাটাঘাটির ঘনঘটায় তোমাকে খুব তৃপ্ত দেখি,

তুমি বরং ওই পুকুরেই নাইতে নামো

উংক পাবে, জলও পাবে।

চুল ভেজারও তেমন কোন আশঙ্কা নেই,

ইচ্ছেমত যেমন খুশি নাইতে পারো।


ঘোলা পানির আড়াল পেলে

কে আর পাবে তোমার দেখা।

মাছ শিকারেও নামতে পারো

তুমি বরং ঘোলা পানির মাছ শিকারে

দেখাও তোমার গভীর মেধা।


তুমি তোমার স্বভাব গাছে দাঁড়িয়ে পড়ো

নিরিবিলির স্বপ্ন নিয়ে আর কতকাল?

শুধু শুধুই মগজে এক মোহন ব্যধি

তুমি বরং কুকুর পোষো, বিড়াল পোষো,

কুকুর খুবই প্রভুভক্ত এবং বিড়াল আদরপ্রিয়

তোমার জন্য এমন সামঞ্জস্য তুমি কোথায় পাবে ?

.

.

সায়ান ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে আছে অতসীর দিকে।অতসী ভাবলেশহীন ভাবে রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ এর কবিতাটা আবৃত্তি করে চায়ের কাপে চুমুক দিলো।

এই পাঁচ দিনে ওর পেটে খাবার খুব কম পড়েছে যা পড়েছে তাও বমি করে বেরিয়ে গেছে। একটুও শক্তি নেই। তার উপর আবার দিহানের সাথে দেখা। মন থেকে কিভাবে যে ওর সামনে ছিলো অতসী নিজেও জানে না। 

হাত পা ভেঙে আসছিলো। মাথা ঝিমঝিম করছিলো। তবুও সাহস শক্তি জুগিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। দিহানের প্রতিটি কথার হয়তো উত্তর দেয়নি কিন্তু রাইমার জন্য কোন ক্ষতির কারণ নিজেও হয়নি। 

চা মুখে দিতেই পেটের ভিতর মোচড় দিচ্ছে। 

এই বুঝি বমি এলো। 

কিন্তু এভাবে চলবে না, শারিরীক ভাবে সুস্থ হলে অবশ্যই মন থেকেও শক্তি আসবে। 

.

-তোমার সাহস কি দিন দিন বাড়ছে না? 

-সাহস জন্মগত ভাবেই আছে। দেখতে চাচ্ছেন? 

- সুস্থ হয়েছো মনে হচ্ছে 

- জ্বী!  so stay away of me..  নইলে হাড্ডিগুড্ডি ভেঙে দিবো। 

.

  

.

সায়ান কিছু বলার আগেই ইফাদ এসে হাজির হয়। ইফাদের দু হাতে দুই প্যাকেট। এগিয়ে দেয় অতসীর দিকে। 

.

-দাদাভাই!  এগুলো কি? 

- যা খেলে আপুমণি দ্রুত শক্তি পাবে। পেয়ারা, আম। 

-তুমি কি করে জানলে আমার খেতে ইচ্ছে করছিলো? 

-বোনের মনের খবর আমি রাখবো না তো কে রাখবে শুনি?  

-ধন্যবাদ। আচ্ছা চা না কফি?  

-ঠান্ডা এক গ্লাস পানি। 

-আমি নিয়ে আসছি।

.

.

ইফাদ সায়ানের দিকে ঘুরে বসলো। বন্ধু নয় সায়ান,দিহান,ইফাদ তিন ভাইয়ের থেকেও বেশি। দিহানের বিষয় টা ইফাদ আগে জানলে সায়ানের সাথে অতসীর বিয়ে যেভাবেই হোক বন্ধ করতো। অনামিকা যে এটেনশন সিকার ইফাদ খুব ভালো করেই জানে। অতসীর প্রতি সায়ানের রাগ ছিলো কেনো অতসী ওর মা কে ফিরিয়ে দিয়েছিলো তারপর অনামিকার ন্যাকামি তে ডুবে যায় সায়ান। কিন্তু জেদের বশে অনামিকার সাথে সম্পর্ক রাখলেও ভালো সে যে অতসী কে শুরু থেকে বাসতো এটা আর কেউ না বুঝলেও ইফাদ বেশ বুঝে। অনামিকার প্রতি সায়ানের শুধুই করুণা ছিলো অন্য কিছু না। কিন্তু এই বোকা ছেলেটা এত দিনেও বুঝলো না অনামিকা শুধুই মরীচিকা। যার সব থেকে বড় প্রমাণ ইফাদের হাতে৷ 

.

.

-আচ্ছা ইফু! চার-পাঁচ দিনে কাউকে ভালোবাসা যায়? 

- চার-পাঁচ দিন অনেক বেশি সময়। ভালোবাসতে কয়েক মুহুর্ত যথেষ্ট।

জানিস তো হুমায়ূন আহমেদ কি বলেছেন?  

-ভালোবাসাবাসির জন্য অনন্তকালের প্রয়োজন নেই। এক মুহূর্ত যথেষ্ট।

.

তুই কি আবার নতুন করে কারো প্রেমে পড়েছিস না কি?  

কথাটা বলে ইফাদ হাসতে থাকে আর সায়ান ভ্রুকুচকে তাকিয়ে আছে। 

.

-দাদাভাই তোমার পানি। আর শুনো আপুকে জলদি ঠিক করে দাও। আমি বাড়ি যাবো। আমার দম বন্ধ লাগে এখানে। দুইদিন পর এক্সাম ও আছে।এক্সাম না দিলে ইয়ার গ্যাপ যাবে এমনিতেও এ বছর আমার আর এক্সাম। আপু সুস্থ হলে আমি চলে যেতে পারবো আর হ্যাঁ প্লিজ তাড়াতাড়ি। বাবা বলেছে বাড়িতে উঠতে দিবে না। আমাকে হোস্টেলেই উঠতে হবে। তাড়াতাড়ি না হলে আবার হোস্টেলে সিট পাবো না। 

 

.

অতসী কথা বলে ধপ করে বসে পড়লো। ইফাদ কিছু বললো না, হ্যাঁ! অনামিকা সুস্থ হলেই সব রহস্যের জট খুলবে। ওর রিপোর্ট গুলো দেশের বাহিরে পাঠানো হয়েছে। খুব দ্রুত আসবে কিন্তু  অনামিকা সুস্থ হওয়ার আগে এই বিষয় ইফাদ কে গোপন রাখতেই হবে। 

.

.

.

পুরো ফ্ল্যাটে কেউ নেই। রাইমা এ ঘর ওঘর করে দিন কাটাচ্ছে। দিহানের প্রতি অভিযোগ নেই না অতসীর প্রতি। আশ্চর্য হলেও দিহান কে ভালোবাসতে শুরু করেছে কিন্তু অতসী!  না রাইমা চলে যাবে। অতসী শুধু হারিয়েছে কিছুই পায়নি । এ বেলা  না হয় একটু সুখী হোক। 

একটা রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে রাইমা। এই রুমে পাঁচ দিনেও আসা হয়নি। 

রাইমা দরজা খুলে ভিতরে গিয়ে পুরো হতবাক। 

দেয়াল জুড়ে অতসীর অনেক ছবি। কখনো অতসী ক্যামেরার দিকে তাকানো কখনো আনসেন্সরড। 

রুমের অন্য পাশে রাখা এক বিশাল টেডিবিয়ার। 

টেডিবিয়ার টার গালে হাত রাখতেই রাইমা ডুব দিলো অতীতে........ 

.

.

প্রতিদিন কলেজে যাওয়ার সময় সুপারশপে একটা বড় টেডিবিয়ার দেখা যায় বাহিরে থেকে। অতসী আর রাইমা প্রতিদিন দেখতো আর অতসী বলতো

-দেখিস ওটা আমি কিনবোই কিনবো। 

দাম ছিলো ২৬৮০ টাকা কিন্তু অতসীর জন্য এতটাকা অনেক। নিজের খরচ নিজের দিতে হয়। রাইমা বলেছিলো গিফট করবে কিন্তু অতসী নিজেই কিনবে। প্রায় সাড়ে আটমাস সময় নিয়ে ২৭০০ টাকা জমিয়ে যেদিন কিনতে যাবে ঠিক সেদিন কে যেনো টেডিবিয়ার টা কিনে নিয়ে যায়। অতসী চুপচাপ পুকুরপাড়ে দু ঘন্টা কড়া রোদে বসে ছিলো। রাইমা পুরো শহর খুজেও ওরকম পেয়েছিলো না। মেয়েটা সচরাচর কিছুর শখ করেনা কিন্তু এই টেডির শখ ওর প্রচুর। 

ভাগ্যে ছিলো না মেয়েটার৷ বেটার লাক নেক্সট টাইম বলে হেসেছিলো অতসী। 

বাসায় এসে ড্রয়িং রুমে টেডিবিয়ার টা দেখে দৌড়ে গিয়ে গালে হাত রাখে অতসী।  সবে একটু স্পর্শ করেছিলো ঠিক তখন অনামিকা ওকে টেনে এনে গালে কষিয়ে থাপ্পড় মারে। 

ন্যাকা কান্না করতে করতে বাবা কে বলে ওর কোন এক বেস্ট ফ্রেন্ড গিফট করেছে আর অতসী নষ্ট করে দিচ্ছে।

অতসীর বাবা কিছু না বলেই বের হয়ে যায়। অনামিকা হাতে থাকা গরম চা অতসীর হাতে ঢেলে দেয়। 

.

রাইমাদের বাড়ি পাশাপাশি হওয়াতে সব দেখেছিলো সেদিন। পরে জানতে পারে ওর বাবা সেদিন ওকে খেতে অবধি ডাকেনি। 

.

অনামিকা!  অনামিকা!  অনামিকা!  তুই যে কতবড় কালসাপ তা যদি তোর বাবা বুঝতো! তোর জাস্ট ফ্রেন্ড গুলো কে লাইন করে দাড়া করালে এলাকা ছাড়িয়ে যাবে । তুই সুস্থ থাকতেও আমাদের শান্তি দিস নাই এখন মরার মতো পড়েও তুই অতসীর জীবন নষ্ট করে দিচ্ছিস। আল্লাহ্ তোকে মাফ করবে না। 

.

 দিহান ফিরে এসেছে । রাইমা ধুকপুকানি বুক নিয়ে দিহানের সামনে এসে দাড়ালো। 

-অতসী?  

-আসেনি। আসবে না। 

-কেনো?  

-তোমার জন্য। 

-আমি চলে যাবো। 

-অতসী কে ছুয়ে কথা দিয়ে এসেছি আমি আমাদের সম্পর্ক কে সুযোগ দিবো। 

-আমার তো দয়া চাই না। 

-কিন্তু আমি চাই অতসীর ইচ্ছা কে সম্মান দিতে। 

.

রাইমা কথা বাড়ায় না। অতসীর প্রতি ভালোবাসা আরো বেড়ে গেলো। সত্যি মাঝেমধ্যে আত্নার সম্পর্ক রক্তের সম্পর্ক থেকে বড় হয়ে দাঁড়ায়। 

.

রাত বেড়েই চলেছে। অনামিকার পাশে বসে আছে সায়ান। মনে হাজারো প্রশ্ন পাশের রুমে অতসী।

বাহিরে হালকা বাতাস বইছে। সায়ান উঠে জানালার ধারে দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করে বললো 

---প্রত্যেকে একা হয়ে গেছি ।

কী ভয়ংকর এই একাকীত্ব !

কী নির্মম এই বান্ধবহীনতা !

কী বেদনাময় এই বিশ্বাসহীনতা !

.

.

চলবে

No comments

Powered by Blogger.